ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ সফর ১৪৪৭

লাইফস্টাইল

শিশুর শেখায় অক্ষমতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:২৮, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪
শিশুর শেখায় অক্ষমতা

আরিয়ান চলনে বলনে, আচরণে আর দশটা শিশুর মতই। কিন্তু তার বাবা মা স্কুলে ভর্তি করানোর পর দেখতে পেলেন আরিয়ান একই বয়সের অন্য শিশুদের মত তাড়াতাড়ি কিছু শিখতে পারছে না।

ক্লাসে ব্লাকবোর্ড থেকে কিছু টুকে নিতে তার সমস্যা হচ্ছে। সাধারণ অংক করতে সে হিমশিম খাচ্ছে। খুব সাধারণ শব্দ বানান করে লিখতে পারছে না অথবা ভুল করছে।

তার বাবা মা ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে তারা কেবল হতাশা জনক কথা শুনতে শুনতে নিজেরাই হতাশায় ভুগছেন।
সারা পৃথিবীতে আরিয়ানের মত সমস্যায় রয়েছে অগণিত শিশু। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে আমরা শেখার অক্ষমতা (লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি) বলে থাকি।

যখন কোনো শিশু তার সম বয়সী অন্য বাচ্চাদের তুলনায় শেখার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ভাবে অনেক পিছিয়ে থাকে তখন সে লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটিতে ভুগছে বলে আমরা ধরে নেই। তবে এই ধরনের অক্ষমতা খুব সামান্য মাত্রা থেকে শুরু করে মারাত্মক লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি পর্যন্ত যেকোনো মাত্রায় শিশুর মধ্যে উপস্থিত থাকতে পারে।

লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটিতে শিশুর নিম্নোক্ত বিষয়ে সমস্যা থাকতে পারে:
মনোযোগ দিয়ে কিছু শোনা
চিন্তা করে কথা বলা
পড়তে পারা, লেখা, বানান করা
যুক্তি দিয়ে কাজ করা বা কিছু বোঝানো
অংক করা, সূক্ষ্ম কাজ করা, ইত্যাদি

কেন হয়?
লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি কেন বাচ্চার মধ্যে আসে তার সঠিক কারণ প্রতিটি শিশুর জন্য ভিন্ন হতে পারে। কারও বংশগত ভাবে এটা আসে, আবার কারও জন্মের সময় কোনো সমস্যা যেমন সময়ের আগে জন্ম নেয়া, কম ওজনের শিশু জন্ম নেয়া, জন্মের সময় অক্সিজেন এর অভাব হলে, জন্ম নিতে দীর্ঘ সময় লাগলে শিশু পরবর্তীতে লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটিতে ভুগতে পারে।

জন্মের পরেও অপুষ্টি, মাথায় আঘাত, কঠিন কোনো অসুখ, টক্সিক মেটাল যেমন লেড এর প্রভাবে (বাতাস থেকে অথবা খাবারের সাথে) শিশুর মধ্যে লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটি আসতে পারে।

সমাধান কি?
অনেক লার্নিং ডিজঅ্যাবিলিটিতে ভোগা শিশু সঠিক পরিচর্যা না পেয়ে লেখাপড়ায় ভাল করতে পারে না। সব সময় তার শিখতে না পারার জন্য বাবা মা, শিক্ষক, আত্মীয় পরিজন শিশুটিকেই দায়ি করেন।

এর ফলে শিশু আরও বেশি হীনমন্যতায় ভোগে। এধরনের অনেক শিশুই আর লেখাপড়া শেষ করতে পারে না। এই ধরনের শিশুর জন্য প্রয়োজন বিশেষ পদ্ধতিতে শেখানো যেটাকে উন্নত বিশ্বে এডুকেশন থেরাপি বলে (আমাদের দেশেও চালু হয়েছে)। সেই সাথে অনেক শিশুর অকুপেসনাল থেরাপি এবং সেন্সরি ইন্টিগ্রেসন থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।

তাই শিশুর এধরনের সমস্যা থাকলে তাকে ভাগ্যের হাতে ফেলে না দিয়ে তার জন্য পরিবেশ তৈরি করে দেয়া আমাদের সকলের কর্তব্য যাতে করে শিশুটির জীবন অর্থবহ হতে পারে।

ডা: ওসমান গনি
এম এস সি (নিউরো রিহ্যাব, ইউ কে)
চেয়ারম্যান, ইন্সিটিউট অব নিউরো-ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ
০১৯৩১৪০৫৯৮৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।